বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের কৃষি বিষয়ক একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত। দেশের কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এটির শিক্ষাঙ্গণ আয়তনের দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়।কৃষিবিজ্ঞানের সকল শাখা এর আওতাভূক্ত। মানসম্পন্ন উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ব্যবস্থার নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে দেশে কৃষি উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব বহনে সক্ষম তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কৃষিবিদ, প্রাণিবিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও কৃষি প্রকৌশলী তৈরি করাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লক্ষ্য।
বাকৃবি ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাজেটের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ওয়েবম্যাট্রিক্স বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং ২০১৭ অনুসারে এটি বাংলাদেশের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) প্রকাশিত সর্বশেষ র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১০০১ থেকে ১২০০–এর মধ্যে।আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সংস্থা অ্যালপার ডজার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের প্রকাশিত ২০২২ সালের বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫৬ জন গবেষকের নাম স্থান পেয়েছে।
তৎকালীন ১৯৬১ সালে ভেটেরিনারি অনুষদ ও কৃষি অনুষদ নামে দু’টি অনুষদ নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়, কিন্তু তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঘোষণা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই পশুপালন অনুষদ নামে তৃতীয় অনুষদের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন মঞ্চে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াদের মতো কৃষিবিদদেরও চাকরিক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা ঘোষনা দেন।
ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম প্রান্তে প্রায় ১২৬১ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তরে এ ক্যাম্পাসের অবস্থান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল প্রশাসন ভবনসহ বিভিন্ন অনুষদীয় ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ২০০০ আসনের আধুনিক মিলনায়তন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, সম্প্রসারিত ভবন, ব্যায়ামাগার, স্টেডিয়াম, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, জিটিআই ভবন এবং শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ১৩টি হল আছে। যার মধ্যে ৪টি হল ছাত্রীদের জন্য। এছাড়াও রয়েছে ড. ওয়াজেদ মিয়া ডরমিটরী।
বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ টি অনুষদ এবং ৪১ টি বিভাগ রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শস্যের জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর মধ্যে বাউ-৬৩, বাউকুল, বাউধান-২, নামে উফশী ধান জাত- সম্পদ ও সম্বল, বাউ-এম/৩৯৫, বাউ-এম/৩৯৬ নামে ৪টি উফসি সরিষা জাত, ডেভিস, ব্র্যাগ, সোহাগ, জি-২ ও বিএস-৪ নামে ৫টি সয়াবিন জাত, কমলা সুন্দরী ও তৃপ্তি নামে আলুর জাত, লতিরাজ, বিলাসী ও দৌলতপুরী নামে তিনটি মুখীকচুর জাত, কলা ও আনারস উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি, রাইজোবিয়াম জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি, সয়েল টেস্টিং কিট, পেয়ারা গাছের মড়ক নিবারণ পদ্ধতি, বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহজ পদ্ধতি, অ্যারোবিক পদ্ধতিতে ধান চাষ প্রযুক্তি, শুকানো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ, পশু খাদ্য হিসেবে ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির কলাকৌশল। আফ্রিকান ধৈঞ্চার অঙ্গজ প্রজনন, এলামনডা ট্যাবলেট, আইপিএম ল্যাব বায়োপেস্টিসাইড, বিলুপ্তপ্রায় শাকসবজি ও ফলের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ ও মলিকুলার বৈশিষ্ট সনাক্তকরণ কলাকৌশল।
এছাড়া কৃষি অর্থনীতি সম্পর্কিত মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানী গবেষণা ও তৎপরতার মাধ্যমে টেকসই শস্যবীমা কার্যক্রম, ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রম, পশুসম্পদ ও ডেইরি উৎপাদনের উন্নয়ন, স্বল্প ব্যয়ে সেচনালা তৈরি করা, উন্নত প্রযুক্তির লাঙ্গল ও স্প্রে মেশিন, বাকৃবি জিয়া সার-বীজ ছিটানো যন্ত্র, সোলার ড্রায়ার, উন্নত প্রযুক্তির হস্তচালিত টিউবয়েল পাম্প, জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নতমানের দেশি চুলা, মাগুর ও শিং মাছের কৃত্রিম প্রজনন কলাকৌশল, ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, খাচায় পাঙ্গাস চাষ পদ্ধতি, পেরিফাইটন বেজড মৎস্যচাষ, দেশি পাঙ্গাসের কৃত্রিম প্রজনন, ডাকউইড দিয়ে মিশ্র মৎস্যচাষসহ মাছের জীবন্ত খাদ্য হিসেবে টিউবিফিসিড উৎপাদনের কলাকৌশল, পুকুরে মাগুর চাষের উপযোগী সহজলভ্য মৎস্যখাদ্য তৈরি, শুক্রাণু ক্রয়োপ্রিজারভেশন প্রযুক্তি, স্বল্প ব্যয়-মিডিয়ামে ক্লোরেলার চাষ প্রযুক্তি, মাছের পোনা পালনের জন্য রটিফারের চাষ, মাছের রোগ প্রতিরোধকল্পে ঔষধি গাছের ব্যবহার এবং মলিকুলার পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছের বংশ পরিক্রম নির্ণয়, তারাবাইম, গুচিবাইম ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন, ধানক্ষেতে মাছ ও চিংড়ি চাষ, পুকুরে মাছ চাষ, সহজলভ্য মাছের খাদ্য তৈরি, একোয়াপনিক্সের মাধ্যমে মাছ এবং সবজি উৎপাদন, মাছের বিকল্প খাদ্যের জন্য ব্লাক সোলজার ফ্লাই চাষ এবং কচি গমের পাউডার উৎপাদন।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিজ্ঞানীরা মিলে দেশে প্রথমবারের মতো লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য (জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করেছেন।
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
লেখাটি পড়ে ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।