বোটানিক্যাল গার্ডেন

বোটানিক্যাল গার্ডেন

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন ময়মনসিংহের অন্যতম দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম। এটি গাছপালা ও লতাপাতার এক বিরল সংগ্রহশালা।

বোটানিক্যাল গার্ডেন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা বোটানিক গার্ডেন্স কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল (বিজিসিআই) কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেন এটি।

চারদিকে সাজানো গোছানো ছবির মত এই বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসে। বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ সম্পর্কে সহজে ধারণা পাওয়া যায় এখানে।

বিজ্ঞাপন

প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত ও প্রায় বিলুপ্ত উদ্ভিদরাজিকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে ১৯৬৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ এবং তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ওসমান গণির হাত ধরে ২৪ একর জমি নিয়ে গার্ডেনটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৫৫৮ প্রজাতির বিভিন্ন উদ্ভিদ রয়েছে।

দেশের মূল্যবান উদ্ভিদ প্রজাতি বিশেষ করে বিরল প্রজাতির ঔষধি ও সুগন্ধি জাতীয় উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য রয়েছে পট হাউজ নামে বিশেষ সংরক্ষণাগার। ঔষধি জোনে রয়েছে ৪৮ প্রজাতির উদ্ভিদ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ অশ্বগন্ধা,অ্যানথেরিয়াম, ব্রাউনিয়া, কর্পুর, অঞ্জন, আগর ইত্যাদি।

ক্যাকটাস ও অন্যান্য সংবেদনশীল উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য দুটি বড় গ্রিন হাউজ রয়েছে গার্ডেনটিতে। বিভিন্ন ধরনের ফুলের মধ্যে রয়েছে-জেসিয়া, সিলভিয়া, হৈমন্তি, ক্যামেলিয়া, আফ্রিকান টিউলিপ, ট্যাবেবুইয়া, রাইবেলী, অ্যাস্টার, কসমস, ডায়ান্থাস, রঙ্গণ ইত্যাদি। ফলের মধ্যে রয়েছে- স্টার আপেল, আমেরিকান পেয়ারা, কমলা, আঙুর, প্যাসান ফল এবং বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল।

বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে- ডেফল, নাগলিঙ্গম, কালাবাস, কারিলিফ, ফলসা, মনহোটা, পেয়ালা, মাক্কি, বনডুবি, লোহাকাট, উদাল, পানবিলাস, অর্জুন, বয়রা, হরতকি, কাটাসিংড়া, টিকমা, প্যাপিরাস, রাইবেলী, স্ট্যাভিয়া, হিং, পেল্টোফোরাম ইত্যাদি।

বছরের প্রায় সবসময়ই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চার লাখেরও বেশি দর্শনার্থী গার্ডেনটি পরিদর্শনে এসে মুগ্ধ হয়। গার্ডেনের সৌন্দর্য বর্ধন এবং দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য বন্য পশু-পাখির প্রতিকৃতি নির্মাণ করে বিভিন্ন দর্শণীয় পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিকৃতির মধ্যে দ্বীপ জোনে দুটি রাজহাঁস ও দুটি সারস, গেইটের সম্মুখে পাইন গাছের গোড়ায় পশুর রাজা সিংহ, অরকোরিয়া গাছের গোড়ায় হরিণ, বাগানের ভেতরের প্রবেশ দ্বারের কাছেই রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বিড়াল। দর্শাণার্থীদের শুভ কামনায় শাবকসহ রয়েছে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের জাতীয় পশু ক্যাঙ্গারু। তবে সবগুলোই বালু আর সিমেন্টের তৈরী।

বোটানিক্যাল গার্ডেনে দর্শানার্থীদের বিশ্রাম ও বসে আড্ডা দেবার জন্যে রয়েছে বেঞ্চ। বিশ্রাম বেঞ্চগুলো নদীর পাড় ঘেষে হওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ভেসে যাওয়া নৌকা দেখা যায় এখানে বসে।
গার্ডেনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিকভাবে সাহায্যের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম, স্নাতক পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীদের উদ্ভিদ জগৎ সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনসহ এম.এস ও পিএইচডি অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রমে বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করে আসছে এটি।

শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণের জন্যে সপ্তাহে শুক্র এবং শনিবার(এবং ছুটির দিনগুলোতে) সকাল ৯ টা হতে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বাকি দিনগুলোতে দুপুর ২টা-৫টা খোলা থাকে।টিকেট মূল্য মাত্র দশ টাকা।

অনিন্দ্য সুন্দর আর নানা উদ্ভিদের সমন্বয়ে তৈরি এই বোটানিক্যাল গার্ডেনটি বৃহত্তম ময়মনসিংহের গর্ব। এই বোটানিক্যাল গার্ডেনটি দিনের পর দিন মাথা উঁচু করে তার চির সবুজের সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মাঝে বিলিয়ে যাচ্ছে।

Similar Posts

One Comment

  1. লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
    লেখাটি পড়ে ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *