শশী লজ/shoshilodge-ইতিহাস এবং ভ্রমন গাইড
ময়মনসিংহের দর্শনীয় স্থান শশী লজের ইতিহাস:
ময়মনসিংহ শহরের রাজবাড়ী হিসেবে খ্যাত ‘শশী লজ’ হচ্ছে মূলত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ি। তিনি মুক্তাগাছা জমিদার (মুক্তাগাছা রাজবাড়ী) পরিবারের বংশোদ্ভূত মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর দত্তক পুত্র ছিলেন । ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে, মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী ময়মনসিংহের কেন্দ্রস্থলে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের অনতিদূরে একটি নান্দনিক দ্বিতল ভবন তৈরি করেন। আদরের দত্তকপুত্র শশীকান্তের নাম অনুসারেই এটির নামকরন করা হয়েছে ।
বর্তমানে যে ভবনটি শশী লজ নামে খ্যাত তা মূলত প্রাচীন শশী লজের পুনর্নির্মিত ভবন। ১৮৯৭ সালে গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পে দ্বিতল ভবনটি বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। এতে মহারাজা সূর্যকান্ত বড়ই ব্যথিত হন। পরবর্তীতে পিতৃশোক উপলব্ধি করে মহারাজা শশীকান্ত শশী লজ ভবনটি নতুনভাবে নির্মাণ করেন। ১৯০৫ সালে মহারাজা শশীকান্ত একতলবিশিষ্ট বর্তমান শশী লজ ভবণটি নির্মাণ করেন।
বর্ণনা:
শশী লজ এর মূল ফটকটি উত্তরমুখী যা ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১৬ টি গম্বুজ ধারণ করে আছে। ফটকের ভেতরে ঢুকলে প্রথমেই রয়েছে একটি জল ফোয়ারা। এবং গ্রিক দেবী ভেনাস এর একটি অর্ধনগ্ন মূর্তি (শশী লজে ভেনাস এর মূর্তি)। মূল ভবনের সামনে ও পাশে রয়েছে বাগান ও পদ্মবাগান। এবং ভবনের পেছনে দ্বিতল স্নানঘর সমেত মার্বেল পাথরে বাঁধানো স্নানঘাট। দীঘিতে আরো দুটো স্নানঘাট রয়েছে যেগুলোর বর্তমানে একদম জরাজীর্ণ অবস্থা।
তাছাড়া ভবনের পেছনদিকে ঘাসে মোড়ানো একচিলতে উঠোনও রয়েছে। দিঘির চারপাশে শোভা বর্ধনের জন্য সারি সারি নারিকেল গাছ লাগানো হয়েছে। এটির মূল ভবনটি মূলত চারটি অংশে বিভক্ত। সেগুলো হলো, বাসভবন; হলঘর; নাচঘর এবং স্নানঘর। মূল ভবনের ভেতরের এই স্নানঘরে একটি সুরঙ্গ দৃশ্যমান। ধারণা করা হয় এই সুরঙ্গ পথ মুক্তাগাছা জমিদারবাড়ি অভিমুখী। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের কথা চিন্তা করেই এই সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল বলে মনে হয়।
শশী লজ এর বর্তমান তাৎপর্য:
১৯৫২ সাল থেকে শশী লজ এর একটি অংশ ময়মনসিংহের মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পরবর্তীতে ওই বিভক্ত অংশটি মূল শশীলজ ভবন হতে একটি দেয়াল দ্বারা আলাদা হয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ২০১৫ সালে শশীলজ ভবনটিকে জাদুঘর হিসেবে স্থাপনের জন্য এর অধিকার বুঝে নেন। কিন্তু তৎক্ষণিকভাবে এটিকে জাদুঘর স্থাপন সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে 2019 সালে ময়মনসিংহ জাদুঘর হতে কিছু প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী এটির মূল ভবনে স্থানান্তরের মাধ্যমে জাদুঘর হিসেবে শশী লজের পথচলা শুরু হয়।
ভ্রমণ ও পরিদর্শন: (শশীলজ সময়সূচি)
ময়মনসিংহ শহরের ভেতরের কেউ এটি পরিদর্শন করতে চাইলে শহরের যেকোনো স্থান থেকে রিক্সা যোগে চলে আসতে পারেন। রিকশাওয়ালাকে শুধু ’শশী লজ’ বললেই হবে। শহরের বাইরের মানুষের ক্ষেত্রে দুইভাবে যাতায়াত করা যেতে পারে।
যদি কেউ শহরের বাইরে থেকে বাই-রোডে শহরে আসেন, তাহলে শহরের যেকোনো স্থান থেকেই রিক্সা পেয়ে যাবেন। দূরত্বভেদে রিকশা-ভাড়ার পরিমাণ কমবেশি হবে। যদি কেউ ট্রেনে শহরে আসেন, তাহলে রেলওয়ে স্টেশন থেকে রিক্সা যোগে চলে আসবেন। রেলওয়ে স্টেশন থেকে রিকশা-ভাড়া সাধারনত ৩০ থেকে ৫০টাকা। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া অথবা আনুষঙ্গিক কারণে রিক্সা ভাড়া একটু-আধটু কমবেশি হতে পারে।
এখন আসি শশী লজে ঢোকার ব্যাপারটায়, আপনাকে অবশ্যই এমন সময় আসতে হবে যখন কোন সরকারি বন্ধ চলছে না। ভবনের ফটক থেকে টিকিট সংগ্রহ করে তারপর প্রবেশ করতে হবে। টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। এর মাঝেই শশী লজ এর সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ জাদুঘর ভ্রমণের খরচও যুক্ত। অর্থাৎ মূল ভবনের ভেতরে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে আর আলাদা করে অর্থ খরচ করতে হবে না। সকাল 10 টা থেকে বিকাল 4 টার মাঝে শশী লজে ভ্রমণ করা যাবে। সাথে কোনপ্রকার ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢোকা যাবে না। ভেতরে যেকোন প্রকার আইনবিরুদ্ধ কার্যক্রমের জন্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
লোকেশন:
ময়মনসিংহ জিরো পয়েন্ট মোড় থেকে পশ্চিম দিকে টাউন হল অভিমুখী একটি রাস্তা রয়েছে। ঐ বরাবর 100 মিটার সামনে গেলে হাতের বাম পাশেই শশী লজ। অথবা নতুন বাজার ট্রাফিক মোড় থেকে উত্তর দিকের রাস্তা বরাবর 200 মিটার এগিয়ে গেলে হাতের ডানপাশে শশীলজের অবস্থান।
thanks a lot for this informative blog
it’s my pleasure Bro…
ধন্যবাদ ♥️