প্রাচীন ময়মনসিংহের অবস্থান-কামরুপ রাজ্য নাকি বঙ্গ?
বাংলাদেশের প্রাচীনতম শহরের মধ্যে অন্যতম একটি শহর ময়মনসিংহ । এটি এক সময় বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা ছিল । ১৯৭০ সাল পর্যন্ত একে বৃহত্তর ময়মনসিংহ নামে ডাকা হতো ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ময়মনসিংহ ঢাকা বিভাগ এর অংশ ছিল ।
১৪ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর এবং জামালপুর নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত হয়। পূর্বে টাঙ্গাইল এবং কিশোরগঞ্জ বৃহত্তর ময়মনসিংহের অংশ হলেও পরবর্তীতে এই দুটি ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত হয়।
ভারতবর্ষে আর্যদের আগমন ঘটলেও এই অঞ্চলে আর্য ধর্মের তেমন প্রসার ঘটেনি যার থেকে কিছুটা অনুমান করা যায় তখন ময়মনসিংহের অস্তিত্ব ছিলনা। কোন কোন ঐতিহাসিকদের মতে এই অঞ্চল তখন বঙ্গোপসাগরে নিমজ্জিত ছিল। সংহিতার কালেও বঙ্গ বা কামরুপ রাজ্যের কোন অবস্থান জানা যায়নি এরপর রামায়ণ এবং মহাভারতের সময়কালীন বঙ্গের কিছু অঞ্চলের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও এ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
ময়মনসিংহের অবস্থান জানার জন্য ব্রহ্মপুত্র এর অবস্থান জানাটা রীতিমতো আবশ্যক। মহাভারতে বঙ্গদেশের কিছু অঞ্চল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলেও ব্রহ্মপুত্রের স্পষ্ট অবস্থান সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় নি। এ থেকে কিছুটা ধারনা পাওয়া যায় যে তখনও ময়মনসিংহের অস্তিত্ব ছিলনা।
মহাভারত বিশ্লেষণ করলে কিছুটা আভাস পাওয়া যায় যে তৎকালীন লোহিত সাগরই বর্তমান ব্রহ্মপুত্র যা ব্রহ্মকুন্ড থেকে উৎপন্ন হয় হিমালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। অর্থাৎ সর্বোপরি এটাই বলা যায় যে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সাল অবধি ময়মনসিংহের কোন অস্তিত্ব ছিল না।
মূলত ময়মনসিংহের অবস্থান জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০২ সালে যখন গ্রিক পর্যটক মেগাস্থিনিস ভারতবর্ষে আসেন। গ্রীক বীর আলেকজান্ডার এর নির্দেশে এই পর্যটক ভারতবর্ষে অবস্থান করে ইন্ডিকা নামক গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে উল্লেখিত মানচিত্রে ময়মনসিংহের অবস্থান বোঝা যায় যা কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত দেখানো হয়েছে।
৬৪৫ সালের পূর্বে চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ভারতবর্ষে আসেন। তখন কাছাড়, আসাম এবং ময়মনসিংহ ছিল কামরূপ রাজ্যের শাসন কর্তা কুমার ভাস্কর বর্ম্মণ এর অধীনে এ থেকে বুঝা যায় বর্তমান ময়মনসিংহ তৎকালীন কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল
ময়মনসিংহ বঙ্গের অংশ ছিল নাকি কামরূপ রাজ্যের তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও সেন বংশের শাসন আমল বিশ্লেষন করলে এর স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। সেন বংশের বল্লাল সেন যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন তিনি কৌলিন্য প্রথা চালু করেন। এতে ব্রাহ্মণ কায়স্থ ও বৈদ্যদের মধ্যে বিপ্লব ঘটে। ঠিক ঐ সময়ই বল্লাল সেন নিজ বর্ণ ব্যতীত অন্য বর্ণের নারী বিয়ে করেন এবং ওই নারীর অন্ন গ্রহণ করতে সকলকে বাধ্য করেন।
নিজ বর্ণ ব্যতীত অন্য বর্ণের অন্ন গ্রহণ করলে জাত চলে যাবে এই ভয়ে অনেক ব্যক্তি ও পরিবার বঙ্গ ছেড়ে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে চলে আসেন অর্থাৎ ময়মনসিংহে আসেন এ থেকে বোঝা যায় বঙ্গ ময়মনসিংহের বাহিরে যা কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।
তৎকালীন ময়মনসিংহ যে কামরূপ রাজ্যের অধীনে ছিল তার আরও একটি প্রমাণ এই যে, বল্লাল সেনের পুত্র লক্ষণের সময় বাংলায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা যায় তখনই ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী পূর্ব নাদিয়ায় আক্রমণ করে। মূলত তিনি কামরূপ রাজ্য কে লক্ষ্য করে এসেছিলেন কিন্তু বৃহৎ নদীর কারণে এপারে আসতে পারেননি। ওই নদীটি ছিল ব্রহ্মপুত্র । এবং এপারে ছিল ময়মনসিংহ এবং আরো বেশ কয়েকটি অঞ্চল যে গুলো কামরূপের অন্তর্গত।
❤️❤️
❤️