মুক্তাগাছার পাথরের শিব মন্দির
পাথরের শিব মন্দির, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত মুক্তাগাছা উপজেলা সদরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত প্রাচীন একটি শিবমন্দির। এটি ময়মনসিংহ জেলার প্রাচীনতম একটি মন্দির এবং একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ময়মনসিংহস্থ মুক্তাগাছার তৎকালীন আটআনী জমিদার রাজা জগৎকিশোর আচার্য্য ১২৭০ বঙ্গাব্দে (১৮৬৩ সালে) এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অপরূপ সুন্দর এই মন্দিরটির স্থপতি ছিলেন বিহারের রাজধানী পাটনার ময়েজ উদ্দিন।
ইতিহাস:
আচার্য জমিদার বংশ এর প্রতিষ্ঠাতা বগুড়ার অধিবাসী শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য মুর্শিদাবাদের দরবারে কর্মরত থাকা অবস্থায় তৎকালিন নবাব মুর্শিদকুলি খানের (রাজত্বকাল ১৭১৭-১৭২৭) অনুগ্রহে ১৭২৫ সালে আলাপসিং পরগণার বন্দোবস্ত নিয়ে মুক্তাগাছায় বসবাস ও জমিদারি শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে সেখানে মোট ১৬ জন জমিদারের উদ্ভব হয়। তাই এই অঞ্চলটি ‘ষোল হিস্যার জমিদারি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এই ষোল ‘হিস্যা’ বা অংশের মধ্যে অর্ধেক বা আট-আনা অংশের জমিদার ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্যের বংশধর রাজা জগৎকিশোর আচার্য্য। তাই তাঁকে বলা হতো আটআনী জমিদার ।
রাজা জগৎকিশোর আচার্য্য ১৮৬৩ সালে পাথরের শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচুর অর্থের বিনিময়ে পাটনার বিখ্যাত স্থপতি ময়েজ উদ্দিনকে দায়িত্ব প্রদান করলে ময়েজ উদ্দিন পাথর কেটে দেওয়ালের আকর্ষণীয় নকশা, শিখরের লতাপাতা ও খিলানের কাজে সাজানো দৃষ্টিনন্দন এই মন্দিরটি গড়ে তুলেন। আনুমানিক ৮ মিটার উঁচু দক্ষিণমুখী মন্দিরটি ৬.৫ বর্গমিটার আয়তনের ভিত্তিবেদীর উপরে প্রতিষ্ঠিত। এক কক্ষ ও এক বারান্দা বিশিষ্ট মন্দিরটির একটিমাত্র শিখর বা রত্ন রয়েছে। লম্বাটে আকারের পুরো মন্দিরটি সুদৃশ্য তামাটে বর্ণের পাথরের তৈরী। এই ধরনের পাথরের তৈরি একটি মন্দির ভাওয়াল রাজার শ্মশানবাড়িতে দেখা যায়। ‘রণেশ্বর শিব মন্দির’ নামের সেই মন্দিরটি জমিদার রণেন্দ্র নারায়ণ রায় বাহাদুরের সমিধিতে তাঁর স্ত্রী সরযূবালা দেবী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মুক্তাগাছা জমিদার পরিবারের শেষ প্রতিনিধি দেবাশীষ আচার্য্যের বসবাস ছিল বর্তমানের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের স্থানে। এই ক্যাম্পের সদর দরজার উল্টো দিকে একটি বাড়ির ভেতরেই পাথরের শিব মন্দিরের অবস্থান।
বর্তমান অবস্থা :
মুক্তাগাছার পাথরের শিবমন্দিরটি বর্তমানে জীর্ণপ্রায় এবং ধ্বংসোন্মুখ। ইট-সুরকির গাঁথুনিতে গজিয়ে উঠেছে অবাঞ্ছিত আগাছা। লতাপাতার নকশা দিয়ে মোড়ানো দেওয়ালে দৃশ্যমান একাধিক ফাটল। তবে ময়মনসিংহের অন্যান্য প্রাচীন মন্দিরগুলির তুলনায় এই মন্দিরটির অবস্থা এখনো কিছুটা ভালো। মন্দিরটি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীনে সংরক্ষিত।
যাওয়ার উপায়:
ঢাকাস্থ মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সারাদিন ময়মনসিংহে সরাসরি বাস চলাচল করে। দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও ময়মনসিংহের নিয়মিত বাস সার্ভিস আছে। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রেনেও ময়মনসিংহে আসা যায়। ময়মনসিংহ শহর থেকে মুক্তাগাছা আসার অনেক বাস আছে। আবার ময়মনসিংহ মুমিনুন্নেসা মহিলা কলেজ মোড় (টাউন হল মোড়) থেকে সিএনজি অটোতেও মুক্তাগাছা আসা যায়।
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
লেখাটি পড়ে ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
thanks a lot..!
💝💝