ভাষাশহীদ আব্দুল জব্বার
ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের জন্ম ১০ অক্টোবর ১৯১৯ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে। তার পিতার নাম হাছেন আলী এবং মাতার নাম সাফাতুন নেছা।
তিনি ধোপাঘাট কৃষিবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন এবং পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে লেখাপড়া সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি তার পিতাকে কিছুদিন কৃষি কাজে সাহায্য করেন।
পরবর্তীতে আরো ভাল কিছু করার আশায় তিনি নারায়গঞ্জে চলে আসেন এবং এখানে পরিচয় হয় এক ইংরেজ নাবিকের সাথে। তিনি আব্দুল জব্বারকে রেঙ্গুন শহরে একটি চাকুরির ব্যবস্থা করে দেন।
১২ বছর আব্দুল জব্বার রেঙ্গুনে কাজ করেন এবং স্বাস্থ্যগত কারনে মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে জাহাজে কাজ করতে না পারার দরুন পুনরায় গ্রামে ফিরে আসেন।
তিনি গ্রামে ফিরে গ্রামের ছেলেদের নিয়ে একটি গ্রাম্য ডিফেন্স দল গঠন করেন যে দলের নেতৃত্বে তিনি কমান্ডার হিসেবে ছিলেন।
১৯৪৯ সালে তিনি তার এক বন্ধুর বোন আমেনা খাতুনকে বিয়ে করেন। ঐ সংসারে তার একমাত্র ছেলে নুরুল ইসলাম বাদলের জন্ম হয়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ২/৩ দিন আগে তিনি তার ক্যান্সার আক্রান্ত শাশুড়ীকে চিকিৎসা করাতে জনাব সিরাজুল ইসলামের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করান।
তিনি তার আত্নীয়া আয়েশা খাতুন এবং পরিচিত আব্দুল হাইয়ের বাসায় ঐ সময় রাত যাপন করে দিনে শাশুড়ীকে সেবা করতে মেডিকেলে চলে আসতেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যখন বাংলাক ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে ছাত্র জনতা সোচ্চার এবং শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত ঢাকার রাজপথ তখন তিনি মেডিকেলে ভর্তি হওয়া রোগী, তার শাশুড়ীর শয্যার পাশে বসে থাকতেন।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার অল্পক্ষণ আগে সিরাজুল ইসলামের সাথে শাশুড়ীর রোগের ব্যাপারে কথা বলে তিনি মেডিকেলের গেটের বাইরে শাশুড়ীর জন্য কিছু ফল কিনতে গেলে ঐ সময় তিনি দেখেন রাষ্ট্র ভাষার দাবীতে বেশ কিছু ছাত্র-জনতা ব্যানারসহ সমবেত হয়েছে এবং বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে অনবরত শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছে।
আব্দুল জব্বার আর স্থির থাকতে পারেনি তিনি অসুস্থ শাশুড়ীর জন্য ফল নেওয়ার কথা ভুলে গিয়ে ব্যানার হাতে মিছিলের অগ্রভাগে এসে দাঁড়ান।
ঐ সময়ে পুলিশের এলোপাতাড়ি গোলাগুলি শুরু হয়, এতে আব্দুল জব্বার গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
শহীদ আব্দুল জব্বারকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে মরনোত্তর একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করে।
ঢাকার আজিমপুর পুরনো গোরস্থানে মহান ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন।